Tuesday, June 28, 2016

বিষয়ঃ আলোচনা

প্রিয় পাঠক/ব্লগার,

ফেসবুকঃ ২২.৫.১৬

 

কূটকচালী ইন ফেসবুক

 

জয়দীপ ঘোষ – আসলে যেটা ছিল একদিন পায়োনিয়ার ফোর্স সেটা কেমন যেন ক্ষয়ে গেল, নির্ধারণের ক্ষমতা হারালো ক্রমাগত অপ্রাসঙ্গিক করে দেয়া হচ্ছে বোথ ইকোনমিক্যালি এন্ড সোস্যালি। এটা সম্পুর্ণ আমার পার্সোনাল অভিমত।

গসু-২ (2)
হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি…!!!


বাংলা ব্লগারু – আমি একমত। কিন্তু কোনও অভিমতই তো আর “পার্সোনাল” থাকে না, বিশেষতঃ যখন  সেটা বড়সড় কোনো সংঘাতের মুখে পড়ে। এই এলিট বনাম নিম্নবর্গের সংঘাত আজ পরিস্কার ফুটে উঠছে যাকে একদা বামপন্থীরা ক্লাস স্ট্রাগল বলে চালিয়ে দিয়েছিলেন। তোমার দেওয়া ছবিটা একসময়ের স্ট্যাটাস সিম্বল ছিল শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক শ্রেণীর বাড়িতে। আজ তার রূপ যাই হোক না কেন সেটা ঐ অতিত গৌরবের টিম টিম করা চিহ্ন – একমাত্র কিউরিও ভ্যালু ছাড়া যার আর কিছু নেই! এখন কথা হচ্ছে যে শিক্ষিত, প্রগতিশীল, “পায়োনিয়ার”, “নির্ধারক” বাবু বাঙালী ভদ্রলোক শ্রেণী কেন “অপ্রাসঙ্গিক” হয়ে উঠল আজ? এমন তো হবার কথা ছিল না।

“দেশের প্রতিটি মানুষের সাথে যে গভীর সংযোগ-সংলাপ থাকা দরকার সে কথা তো নতুন কোনও কথা নয়– আধুনিকতার প্রবক্তা, আমাদের বরণীয় মনীষীরা তা বারে বারে বলেও গিয়েছিলেন আর তার জন্যই তো তাঁরা শিক্ষার উপর এতো জোর দিয়েছিলেন; নিজেরাও সচেষ্ট ছিলেন কি ভাবে শিক্ষার আবহ গড়ে তোলা যায়, প্রসারণ ঘটানো যায় সমাজের সর্বস্তরে, হোক না সে পরাধীন দেশ, তবুও! এটা ভাবতে খুবই অবাক লাগে যে ঐ রকম একটা সময়ে কি ভাবে বিজ্ঞান চর্চা, গবেষণা, শিক্ষাদীক্ষায় প্রাবল্য এসেছিল তা আজও এই স্বাধীন দেশে বসে আমরা ভাবতে পারি না! অথচ আজ তা বুদবুদের মতো মিলিয়ে গেছে কোথায় যেন! আমরা হারিয়েছি সেই গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলো! তখন স্কুলকলেজ স্থাপন করা হত সমাজের সার্বিক মঙ্গলের জন্য আর এখন হয় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে। আর সেখানে ভিড় করতে পারেন সমাজের অর্থবান মানুষরা। যাঁদের সেই আর্থিক ক্ষমতা নেই, অগুনতি হতদরিদ্র নিম্নবর্গীয় মানুষ, তাঁরা ব্রাত্য সেখানে। সরকারী অনুদানে চলা স্কুলকলেজ আর কটা যে বিপুল সংখ্যক মানুষের চাহিদা মেটান যায়? পড়াশোনার মানও যে সব জায়গায় সমান তা নয়। অভাব অভিযোগ বিস্তর। গোদের উপর বিষফোঁড়া সস্তা দলীয় রাজনীতির মাতব্বরি, সূক্ষ্ম রেসিসিজম বা ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক মনোভাব সব মিলিয়ে শিক্ষার সার্বজনীন প্রয়োগ দূরঅস্ত! এভাবেই শিক্ষার আলোক-স্পর্শ অধরা থেকে যায় রামা কৈবর্ত, হাশেম শেখ, রামু বড়ালদের জীবনে।”

শুধু তাই নয়, সংক্ষেপে বলতে গেলে–

“এর উপর সমাজের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী তথাকথিত আলোকপ্রাপ্ত শ্রেণীর মানুষদের বিরাট এক অংশের ব্যাপক, মাত্রাহীন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া!–যাঁদের কোনও চেদবেদ নেই, তাঁরা কি করছেন কেন করছেন সেটা নিয়েও নেই কোনও অনুশোচনা। বরঞ্চ পরোক্ষভাবে এর প্রতি ভেতরে ভেতরে একটা প্রচ্ছন্ন সমর্থন আছে তাঁদের! সবটাই ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠিগত স্বার্থ, ভাবনার ফসল।”

জমিদারী ব্যবস্থা থেকে উদ্ভূত বাবু শ্রেণী বেলজিয়াম কাচের উপর গাড়ী চালিয়ে, বেড়ালের বিয়ে দিয়ে আজ মাল্টিপ্লেক্স ন্যানো স্ট্যাটাস চর্চায় এসে ঠেকেছে! পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে যে  উজ্জ্বলতার চ্ছটা দেখা গেছে ক্রমাগত ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে তা সত্তর দশকে এসে নিভু নিভু হিয়ে গেল। যেটুকু পড়ে রইল সেই “উদ্যোগী” “নির্ধারক” বাবু বাঙালী ভদ্রলোক শ্রেণী  কোনঠাসা হয়ে পড়ল নবকলেবরে সুবিধাভোগী মধ্যবিত্ত কেন্দ্রিক “সুখী বামপন্থার” আবির্ভাবে – শুরু হল মধ্য মেধার চাষ! ফলতঃ যাঁদের হাল ধরার কথা ছিল তাঁরা জীবন জীবিকার তাড়নায় ছিটকে গেলেন। প্রকৃত মেধাসম্পন্ন মানুষরা সমাজকে নেতৃত্ব দেবার বদলে ধীরে ধীরে নিজের নিজের বলয়ে সীমাবদ্ধ হলেন এবং সমাজের বৃহত্তর অংশের থেকে বিচ্ছিন্ন হলেন, শুধু বিচ্ছিন্নই হলেন না তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম গুলোও ক্রমাগত শিকড়হীন হতে শুরু করলো। তৈরী হল ইউরোকেন্দ্রিক ভাবনায় চুবে থাকা নয়া এলিটিজম! সেটা আগেও ছিলো কিন্তু তবুও তাঁরা তাঁদের কাচের স্বর্গ থেকে মাঝে মাঝে  নেমে আসতেন “বাবু” বলা “ছোটলোকদের” মাঝে, বুঝতে চাইতেন তাঁদের “জীবনের মানে”, রাজনীতি  থেকে শিল্প সাহিত্যে যার নজির আছে। এমনিতেই ইংরাজী জানা ভদ্রলোক শ্রেণী বলে একটা অহমিকা ছিলোই (বামপন্থীরাও যার ধারক বাহক) আর ছিল গরীব গুর্বোদের প্রতি একটা প্রবল অধিকারবোধ। অর্থাৎ তাঁরাই ঠিক করে দেবেন “গ্রাম বাংলার মানুষ কেমনভাবে জীবন যাপন করবেন”, কি রকম হবে তাঁদের উন্নয়নের নকশাটা! অথচ বছরের পর বছর “লুন্ঠিত গ্রাম বাংলা”-র রসদে “দেহের সমস্ত রক্ত মুখে জমা” হচ্ছে দেখেও নিরব নির্লিপ্ত থেকেছেন!! বিভেদ বিচ্ছিন্নতা থেকে আজ যখন নিম্নবর্গীয়দের উত্থান প্রবলভাবে আছড়ে পড়ছে, ভোট বাক্সের হিসেব নিকেশ লন্ড ভন্ড হয়ে যাচ্ছে তখন নিজেদের অস্তিত্বের তাড়নায় ব্যঙ্গ বিদ্রুপে ভরিয়ে দিচ্ছেন সোশ্যাল নেট ওয়ার্কিং সাইট থেকে, টিভি পর্দায়, আলোচনায়, খবরের কাগজে মিডিয়া ব্যারনদের প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ অনুপ্রেরণায়! বলা হচ্ছে “জনমোহিনী”, “অনুদান”, “ডোল” অর্থনীতি। ট্যাক্সের পয়সার শ্রাদ্ধ করে মেয়েদের সাইকেল দেওয়া হচ্ছে, দু’টাকা কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে, নগ্ন পদ শিশুকে জুতো দেওয়া হচ্ছে। তখন তো “অপ্রাসঙ্গিক” হবার প্রসঙ্গে বলতেই হয়-

“না!!..এদেশের খেতে না পাওয়া মানুষরা আর কবেই বা পেট পুরে খেতে পেল, এখন যদি পায় তাতে ক্ষতি কি? সাড়ে চার হাজার? ক্ষতি তো! তা অমন সাড়ে চার হাজার তো ৪৭-এর পর থেকে কতবার উধাও হল ঘুষ/কাটমানি/শিল্পপতিদের ব্যাঙ্কের লোন শোধ না করা / কাজে ফাঁকি দেওয়া সরকারী কর্মীদের ডিএ ভাতা ইত্যাদি / ..এই তো সেদিন ৩৮ কোটি টাকায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বউ- এর আঁকা ৮ খানা ছবি কিনল এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া / মহাকাশ যাত্রায় কত শো কোটি, নাঃ! কোটির নিচে কোনও কথা নেই!” -–বা– “হ্যাঁ আবারও বলব! ভন্ডামী আর চাতুরীর খোলোশ ছেড়ে বলব অসংস্কৃত হাউয়াই চটির জীবন দর্শন ও তার ক্ষমতা সার্থক হোক! গোটা লাইব্রেরী গিলে খাওয়া তত্ত্ববাগীশ উর্দ্ধপাদ দন্ড এলিট বুদ্ধিজীবীদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে বলব ঐ মেয়েগুলো আমারও মেয়ে, ঐ মেয়েগুলো সাইকেল পেলে ওদের লেখাপড়াটা হবে, ঐ মেয়েগুলো বইখাতা পেলে ওদের লেখাপড়াটা হবে, ঐ মেয়েগুলো টাকা পেলে ওদের লেখাপড়াটা হবে, ঐ মেয়েগুলোর  লেখাপড়া হলে ওদের সন্তানদেরও লেখাপড়াটা হবে, ওদের সন্তানদের লেখাপড়াটা হলে ওদের সন্তানরা জীবনের মানে খুঁজে পাবে, পথ খুঁজে পাবে! আর সেটা হলে আত্মশক্তি বা স্ব-নির্ভরতাও সবল হবে। ওরা চ্যালেঞ্জ জানাবে ভদ্দরলোকের সমাজকে! যদিও সকলের জানা তবু আর একবার  নৈরাজ্যবাদীর মতন খুঁচিয়ে ঘা করি”!!!!

ফটোঃ জয়দীপ ঘোষ

 

–বাংলাব্লগ টিম

Posted in আলোচনা, রাজনীতি, সংবাদ, সমাজ | Tagged , , , , , , | মন্তব্য দিন

No comments :

Post a Comment